নাগরিকদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পুলিশের ছাড়পত্র নিতে এখন আর থানায় থানায় ঘুরতে হবে না; ঘরে বসে অনলাইনেই তা নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
রোববার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম অডিটরিয়ামে ‘অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়।
উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “এটা চালুর ফলে সেবাপ্রত্যাশী জনগণের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে তারা হয়রানির শিকার হবেন না।”
বাংলাদেশ পুলিশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের যৌথ আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার।
তিনি বলেন, “পুলিশি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা চালুর উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে পুলিশও পিছিয়ে নেই।”
অতিরিক্ত ডিআইজি (আইসিটি) মো. হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন, এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি এ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন থেকে জনগণ ঘরে বসেই অনলাইন ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সেবা পাবেন। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে পরে তা সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবাটি গত ২০ নভেম্বর কুমিল্লা জেলায় এবং গত ১ জানুয়ারি সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। দুটি স্থানে সফলতা পাওয়ায় পর সবখানে চালু হল।
এ পর্যন্ত অনলাইনে সেবা পেতে প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি আবেদন পাওয়া গেছে। তার মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে।
কীভাবে ফরম পূরণ
বিদেশগামী বা বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা দেশে বা দেশের বাইরে যে কোন স্থানে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে pcc.police.gov.bd ঠিকানায় অথবা বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে www.police.gov.bd গিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স মেন্যুতে ক্লিক করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় দলিলাদি এবং সরকারি ফি পরিশোধের চালান স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। আবেদনকারীর ব্যক্তিগতভাবে থানায় আসার প্রয়োজন হবে না।
আবেদনকারী অনলাইনে তার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়মিত জানতে পারবেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর, পুলিশ সুপার/উপ-পুলিশ কমিশনারের প্রতিস্বাক্ষর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন হওয়ার পর আবেদনকারী ব্যক্তিগতভাবে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় অথবা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের ওয়ান স্টপ সার্ভিস কাউন্টার থেকে হাতে হাতে নিতে পারবেন।
আবেদনকারী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে চাইলে তা আবেদনের নির্ধারিত জায়গায় উল্লেখ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কুরিয়ার ফি পরিশোধ সাপেক্ষে আবেদনকারী ঘরে বসে সার্টিফিকেট পেতে পারেন।
কিউআর কোড
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এই সার্টিফিকেটের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে একটি কিউআর কোড প্রিন্ট করা থাকে। যে কোনো স্মার্টফোন থেকে কিউআর কোড স্ক্যানার এ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোডটি স্ক্যান করলে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের একটি অনলাইন লিংক পাওয়া যাবে। যে কোনো ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে লিংকটি ভিজিট করলে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের একটি অবিকল ডিজিটাল কপি কম্পিউটারে দেখা যাবে।
ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক ইস্যুকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জাল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না এবং যে কোন বিদেশি মিশন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারবে, বলেন কর্মকর্তারা।