১লা মার্চ অর্থাৎ মার্চ মাসের ১ তারিখ যাকে কোরিয়ান ভাষায় বলা হয় 삼일절 (Three one Movement) বা ১লা মার্চ স্বাধীনতা আন্দোলন দিবস।
কোরিয়ানদের জন্য এই দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মার্চ ফার্স্ট মুভমেন্ট, যাকে সাম-ইল স্বাধীনতা আন্দোলনও বলা হয়। জাপান শাসন থেকে কোরিয়ার জাতীয় স্বাধীনতার জন্য বিক্ষোভের ধারাবাহিকতা যা ১৯১৯ সালের ১ লা মার্চ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে শুরু হয়েছিল এবং শীঘ্রই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১২ মাস পরে জাপানিরা এই আন্দোলন দমন করার আগে, প্রায় ২০ লক্ষ কোরিয়ান ১৫০০ এরও বেশি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। জাপানি পুলিশ ও সৈন্যরা প্রায় ৭০০০ মানুষকে হত্যা করেছিল এবং ১৬০০০ কোরিয়ান আহত হয়েছিল। আগুনে ৭১৫ ব্যক্তিগত বাড়ি,৪৭ টি গীর্জা এবং ২ টি স্কুল ভবন ধ্বংস হয়েছিলো । প্রায় ৪৬,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে প্রায় ১০,০০০ জন কে বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
এই আন্দোলনটি ৩৩ কোরিয়ান সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতারা শুরু করেছিলেন যারা জাপানের প্রায় দশ বছর শাসনের পরে একটি কোরিয়ান “স্বাধীনতার ঘোষণা” করেছিলেন এবং তারপরে তাদের প্রয়াত সম্রাটের স্মরণ দিবস, ১৯১৯ সালের ১ মার্চ সিউলে একটি গণ-বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন। নির্ধারিত দিনে, ৩৩ জন নেতা কোরিয়ায় জাপানের উপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটাতে আন্তর্জাতিক চাপ আনার প্রত্যাশায় স্বাক্ষর করেছিলেন এবং তাদের এই ঘোষণাপত্রটি দেশজুড়ে পাঠ করেছিলেন।কোরিয়ানদের দমন করা জাপানি-বিরোধী অনুভূতিগুলি একটি দুর্দান্ত বিস্ফোরণে মুক্তি পেয়েছিল এবং কোরিয়ার ইতিহাসে বিদেশী আধিপত্যের বিরুদ্ধে বৃহত্তম জাতীয় প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল।
মূলত, জোসন রাজ্যের ৫০০ বছরের রাজত্ব শেষ করে ১৯১০ সালে জাপান কোরিয়ার উপর মিলিটারি ধাঁচে উপনিবেশ শাসন চালু করে।
জাপানিজরা কোরিয়ানদের উপর ব্যাপক হারে অত্যাচার ও নির্যাতন চালাতে থাকে। বিশেষ করে শ্রমিকদের উপর নেমে আসে নির্যাতনের ভয়াবহ করাঘাত। খুন, ধর্ষণ, গুম, হত্যায় কোরিয়ানরা অসহায় হয়ে পরে।
তার প্রতিবাদে আজ হতে প্রায় ১০২ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯১৯ সালের এই দিনে শাসকগোষ্ঠী জাপানীজদের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করে। যা দীর্ঘ ২৬ বছর পর ১৯৪৫ সালে ৩৫ বছরের উপনিবেশ শাসনের পতন হয়ে কোরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।যার ফলে দুই কোরিয়া (দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়া) সৃষ্টি হয়
প্রাথমিকভাবে ১৯১৯ সালের আন্দোলন চুড়ান্ত সাফল্য না পেলেও এই আন্দোলনকেই কোরিয়ার স্বাধীনতার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। কেননা, এই আন্দোলনের কারনেই কোরিয়ানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই, স্বাধীনতার পরে ১৯৪৯ সাল থেকে এই দিনটিকে (১লা মার্চ) স্বাধীনতা আন্দোলন দিবস হিসেবে কার্যকর করা হয়। এটি দক্ষিন কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া যৌথভাবে পালন করে থাকে।
আজ,১লা মার্চ উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই দেশেই জাতীয় ছুটি পালিত হচ্ছে।
লেখক: মিরাজ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসো।
তথ্যসূত্রঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/March_1st_Movement?fbclid=IwAR3Ye0fvhMY-QjHr4dB21shIc070dKDL7NySAVTxSaV7ipDo0waN57GM-UY